Translate
বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
Freelance
যারা নতুন ফ্রিল্যান্সিং এ আসতে চান বা ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাদের জন্য এটা অনেক কাজে লাগতে পারে।
পড়াশুনাকালীন সময় থেকেই একটা আকঙ্খা ছিল স্বাবলম্বী হওয়া। সেজন্য ষ্টুডেন্ট লাইফ থেকে শুরু করেছিলাম কম্পিউটার হার্ডওয়্যার সার্ভিসিং এর কাজ। নিজে নিজেই শিখেছি, কাজ করেছি, ষ্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় কিছু আয়-রোজগারও করেছি। কিন্তু তা থেকে কখনোই ভাল আয়ের পথ তৈরী করা সম্ভব হয়নি। হার্ডওয়্যার সার্ভিসিং এর কাজ করে সেটা আসলে সম্ভবও নয়। অনেকেই হয়ত কম্পিউটারের দোকান দিয়ে হার্ডওয়্যার সার্ভিসিং এর কাজ করে, কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানে হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করে মোটামুটি আয় করেন, তবে তা নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না।
যেহেতু আমার পড়াশুনার বিষয় ছিল কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। তাই সব সময় টার্গেট ছিল আইটি বেইজ কিছু করার। টার্গেট ছিল স্বনির্ভর হওয়া। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ পড়াশুনাকালীন সময়ে তেমন কোন গাইড-লাইন কারো কাছ থেকে কখনো পাইনি। বড়ভাইদের কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করলে তারা সঠিক পথের সন্ধান না দিয়ে, ভুগোল বুঝানোর চেষ্টা করত। এর কিছু কারনও আছে, সম্ভবত প্রতিদ্বন্দী তৈরী হওয়ার আশঙ্কাতেই হয়ত সিনিয়ররা এমন করে থাকে! তবে সততার সাথে বলতে পারি, আমি এমনটা নই। আমার ভাবনাটা একটু ভিন্ন, আমি চিন্তা করি যার যোগ্যতা আছে সে উপরে উঠে আসবেই। সহায়তা পেলে হয়ত একটু দ্রুত পারবে, আর সহায়তা না পেলে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।বলে রাখা ভাল, চাকুরী করার ইচ্ছা না থাকলেও, পড়াশুনা শেষ করার সাথে সাথে নেটওয়ার্কিং বেইজ একটা চাকুরীর অফার পেয়ে উপায়হীন হয়ে তাতেই যোগ দিলাম। এবং চাকুরী করতে লাগলাম। কিন্তু মনের ইচ্ছা কখনো মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি।
মূল উৎস থেকে ডাটাএন্ট্রির কাজ পাওয়ার ও করার একটা মানষিকতা মনের ভিতর ছিল ছাত্রজীবন থেকে। কোথায় পাওয়া যায় ডাটাএন্ট্রির কাজ এ নিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। ইন্টারনেটে খুুঁজেছি, মানুষের কাছে খুুঁজেছি, সেটা নিয়ে কিছু মজার ঘটনা আছে, সুযোগ হলে অন্য কোন লেখায় সে বিষয়ে লিখব। যাইহোক, এরপর ২০০৮ সালে একদিন অফিস শেষ করে বাসায় যাওয়ার সময়, রাস্তার পাশে পত্রিকার দোকানে কম্পিউটার ম্যাগাজিনে “ফ্রিল্যান্সিং” একটা শব্দ দেখে থমকে দাড়ালাম। সত্যি বলতে ইংরেজি “ফ্রিল্যান্সিং” শব্দের বাংলা অর্থ তখনও জানতাম না। “ফ্রিল্যান্সিং” কি সেটাও বুঝতাম না। তারপরও কৌতুহলী হয়ে ম্যাগজিনটি দেখতে লাগলাম, এবং এক ঝলক দেখে ম্যাগজিনটি কিনে ফেললাম। বাসায় গিয়ে লেখাটি পড়লাম, দেখলাম প্রবন্ধটির শুরুতে লেখা আছে এর পূর্বের সংখ্যায় ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আরও কিছু লেখা আছে। তাই খুঁজে খুঁজে পূর্বের সংখ্যাটিও কিনলাম, সেখানে দেখি লেখা আছে এর পূর্বের সংখ্যায়ও আরও কিছু লেখা আছে, তখন সেটিও খুঁজলাম ও কিনলাম। এরপর থেকে প্রতিমাসে ৪টি কম্পিউটার বিষয়ক ম্যাগাজিন নিয়মিত রাখতাম এবং পড়তাম। এভাবেই সব ম্যাগাজিনে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে লেখা পেলেই পড়তাম এবং সেখান থেকেই ধারণা নিতাম।
এরপর দেখতে দেখতে দিন কেটে যেতে থাকল, কিন্তু অফিসের কাজের প্রচন্ড চাপে ও সময়ের অভাবে ফ্রিল্যান্সিং’টা শুরুই করতে পারছিলাম না। কিন্তু ২০১০ সালের ডিসেম্বরে অফিস পলিটিক্স এর শিকার হলাম, হঠাৎই একদিন ঢাকা থেকে আমাকে ট্রান্সফার করে ১ দিনের নোটিশে একটি বিভাগীয় শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। কর্মজীবনে প্রচন্ড এক ধাক্কা খেয়ে মনে হলো আমার জীবনে এটা কি দূর্ভোগ এসে গেলো! কিন্তু মনকে শক্ত রেখে চিন্তা করেছি, চাকুরীটা ধরে রাখি এবং আপ্রাণ চেষ্টা করি নিজে নিজে কিছু করার। দেখলাম, আল্লাহর অশেষ কৃপায় এখানে কাজের চাপ ঢাকা থেকে অনেক কম। কিন্তু অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাই ২০১১ সালের জানুয়ারীর ৪ তারিখ নিজের উদ্যোগে বাসায় ইন্টারনেট নিলাম।
ঐদিন থেকেই অফিস সময় বাদ দিয়ে বাকিটা সময় বিশেষ করে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৩টা ৪টা পর্যন্ত জেগে থেকে oDesk নিয়ে পড়ে থাকতাম। oDesk-এ একাউন্ট তৈরী, প্রোফাইল তৈরী, স্কিল টেষ্ট দেওয়া, ভাল কাজের সার্কুলার খোঁজ করা, কাজের জন্য আবেদন করা, সব মিলিয়ে একটা নেশার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল আমার ভিতর। এভাবে টানা ৪টা মাস কেটে গেলো। কোন কাজের রেসপন্স পাচ্ছিলাম না, তারপরও হতাশ না হয়ে লক্ষ্য ঠিক রেখে চালিয়ে যেতে থাকলাম। একটাই লক্ষ্য, আমার চাকুরীর বিকল্প হবে ফ্রিল্যান্সিং। এর ভিতরই দেখলাম সারাদেশে ক্লিক পার্টিদের দৌরাত্ন চলছে প্রবলভাবে। একটার পর একটা ক্লিক পার্টিদের লোভনীয় অফার আর টানাটানি চলছে। কিন্তু এরপরও আমি আমার লক্ষ্য থেকে একচুলও সরে যাওয়ার চিন্তাও কখনো করিনি। এভাবে চলতে চলতে হঠাৎই ২০১১ সালের ১৫ এপ্রিল রাত ৪টার সময়, $০.২৫ (২৫ সেন্ট প্রতি ঘন্টায়) এর একটি ডাটাএন্ট্রির কাজ পেয়ে গেলাম। সাথে সাথে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়লাম। সেই কাজ কয়েকদিন ধরে বুঝে বুঝে করতে লাগলাম, এই কাজ শেষ না হতেই এর মধ্যে আল্লাহর রহমতে আরও কয়েকটি কাজ পেয়ে গেলাম, যার পেমেন্ট ছিল ঘন্টায় $০.৩০ (৩০ সেন্ট)।সে সময় ঘন্টায় ২৫ সেন্ট, বাংলায় যার পরিমান মাত্র ১৯ থেকে ২০ টাকা। পেমেন্ট হিসেবে যা প্রথম পর্যায়ে খুবই কম হলেও আমি কোনভাবেই হতাশ হইনি বা হাল ছাড়িনি। লক্ষ্য ছিল একটাই, এই স্বল্প পেমেন্টকে ধীরে ধীরে ভাল অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। সেজন্য ধৈর্য্য ধরে কাজ করে গিয়েছি এবং এখন আমি ঘন্টায় ৩ থেকে ৪ ডলার নিয়মিত পেমেন্ট পাই। কখনো কখনো এই পেমেন্ট ৫ ডলারেও পৌছায়। এভেবে স্ট্রাগল করে ও ধৈর্য্য ধরে আমি আমার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং এখনও করছি।
এখানে একটি বিষয় খেয়াল করুন, ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে শুরু করেছিলাম ২০০৮ সালে। একাউন্ট তৈরী করে আবেদন করতে শুরু করেছিলাম ২০১১ সালের জানুয়ারীর ৪ তারিখ থেকে। আর প্রথম কাজ পেয়েছিলাম ২০১১ সালের এপ্রিলের ১৫ তারিখ। কতটা ধৈর্য্য ধারণ করতে পারলে এত দীর্ঘ সময় একটা বিষয়ের উপর মনোযোগ দেওয়া সম্ভব। আরও একটি বিষয় সবাইকে জানানো প্রয়োজন, আমি কোন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বা কোন ব্যাক্তির কাছে গিয়েও ফ্রিল্যান্সিং শিখিনি বা সাহায্যও পাইনি। বিভিন্ন কম্পিউটার ম্যাগাজিন ঘেঁটে ও অনলাইন থেকে খুঁজে খুঁজে নিয়ম-কানুন শিখেছি। কোন প্রশ্ন সামনে আসলে বা কোন কাজ শেখার জন্য শিক্ষক ভেবেছি এবং বন্ধু হিসেবে সব সময় পাশে পেয়েছি গুগল ও ইউটিউব’কে। যা জানতে চেয়েছি, যা শিখতে চেয়েছি গুগল ও ইউটিউবে গিয়ে সঠিকভাবে সার্চ করে তাইই পেয়েছি। এটি একটি টেকনিক, এটা কারো শিখিয়ে দেওয়া উপায় নয়। সত্যিই, গুগল ও ইউটিউবে আপনি উত্তর খুঁজে পাবেন না এমন কোন প্রশ্ন নেই।
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আমি কি কি কাজ করি?
আমি অফিসিয়াল চাকুরীতে নেটওয়ার্কিং এর কাজ করলেও ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য আমি পার্সোনাল এসিষ্টেন্ট হিসেবে কাজ করি, সাথে ওয়েব রিসার্চ, ডাটা এন্ট্রি এর কাজ করি। টুকটাক ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন এর কাজও করছি পার্সোনাল এসিষ্টেন্ট হিসেবে। যেটা শিক্ষানবীশ এর পর্যায়ে পড়ে। আমার এক ক্লায়েন্ট আমাকে তার কাজের প্রয়োজনেই কিছু শিখায় এবং আমাকে দিয়ে অল্প-স্বল্প ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন এর কাজ করায়। চেষ্ট করছি ধীরে ধীরে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন এর কাজ শিখে নেওয়ার। আশা আছে ভবিষ্যতে এর মধ্যমে আরও ভাল পেমেন্ট পাব।
কিছু অতি জ্ঞানী ফ্রিল্যান্সার কিংবা প্রোগ্রামার টাইপের ফ্রিল্যান্সার’রা, বিশেষ করে ওয়েব ডিজাইনার বা ডেভলপার’রা বলেন, ওয়েব রিসার্চ ও ডাটা এন্ট্রির মতো এই কাজগুলো কোন কাজই নয়। তাদের এটা বোঝা উচিৎ যাদের ঐ ধরনে যোগ্যতা নেই তারা কি করতে পারে!
যেহেতু আমার প্রোগ্রামিং বা ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট এর মতো কোন কাজ জানা ছিলনা তাই আমি চেষ্টা করতে থাকলাম ইংরেজিতে আরও একটু দক্ষতা বৃদ্ধি করার এবং কিছু ওয়েব বেইজ কাজ একটু ভাল করে আয়ত্ব করার। ওয়েব রিসার্চ ও ডাটা এন্ট্রির মতো কাজগুলো অপেক্ষাকৃত সহজ, তাই এগুলোই করার জন্য মনস্থির করলাম। এ কারনে ওয়েব রিসার্চ ও ডাটা এন্ট্রির মতো কাজগুলো করতে কিছু ওয়েব বেইজ কাজও শিখেছি গুগল ও ইউটিউব এর সাহায্য নিয়ে যেমনঃ
১) গুগলে কিভাবে সঠিক ভাবে সার্চ করে সঠিক তথ্য বের করে নিয়ে আসতে হয়।
২) বিশ্বের বিখ্যাত বিভিন্ন ডিরেক্টরি থেকে কিভাবে সঠিক তথ্য বের করা যায়।
৩) গুগলে ও বিভিন্ন ডিরেক্টরিতে সার্চ করে বিভিন্ন ব্যাক্তির যোগাযোগের তথ্য কিভাবে বের করতে হয়।
৪) ওয়ার্ডপ্রেস, ম্যাজেন্টো, ভলিউশন, জুমলা সিএমএস দ্বারা তৈরী করা কোন ওয়েবসাইটে কিভাবে আর্টিকেল পোষ্টিং দিতে হয় ও পণ্য লিষ্টিং করতে হয়।
৫) ebay, alibaba ও amazone এর মতো বিখ্যাত B2B সাইটগুলোতে কিভাবে পন্য লিষ্টিং করতে হয়।
৬) এছাড়া Microsoft Word, Microsoft Excel, Google Spreadsheet এর ব্যবহার ও এর কাজ তো আগেই জানতাম।
নতুনদের জন্য পরামর্শঃ
ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে আপনাকে ডিটারমাইন হতে হবে, অর্থাৎ আপানাকে লক্ষ নির্ধারণ করতে হবে যে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার গড়তে চান। যদি এমন ভাবেন যে, “দেখি একটু ট্রাই করে কি হয়!” তবে আমি বলব এমন করে সময় নষ্ট করার কোন দরকার নেই। আমার ফ্রিল্যান্সিং এ আগমনের ও এগিয়ে যাওয়ার যে ঘটনা আমি আপনাদের জানালাম, যদি এমন স্ট্রাগল করার মন-মানষিকতা থাকে, যদি এমন ধৈর্য্য ধরে শিখতে ও কাজ করতে পারেন তবে শুরু করুন, অন্যথায় নয়। ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো ধৈর্য্য ধরতে পারা ও নিজের মধ্যে শেখার আগ্রহ থাকা। এটা যদি থাকে তবে এগোতে পারেন, নইলে কেটে পড়ুন।ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে কারো কিছু জানার থাকলে বা যে কোন প্রয়োজনে মন্তব্য করতে পারেন, জানা থাকলে অবশ্যই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। যারা এগোতে চান তাদের জন্য শুভ কামনা রইল। আর আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন আরও ভাল কাজ করতে পারি। ধন্যবাদ সবাইকে।
2ND
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আসসালামুয়ালাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আশাকরি করুণাময় আল্লাহর রহমতে সবাই সুস্থ আছেন। দেখতে দেখতে আমাদের মাঝ থেকে আরেকটি বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। শুরু হতে যাচ্ছে নতুন আরেকটি বছর।নতুন বছর মানেই নতুন ভাবনা, নতুন উদ্দীপনায় নতুন কিছু করা। নববর্ষ মানেই জীবনটাকে নতুন করে উপভোগ করা আর নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। একেক জন একেক ভাবে চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে। তাই আপনি যে পেশাতেই থাকুন না কেন সেটাকে ডেভেলপ করুন আর হয়ে উঠুন আত্ম-প্রত্যয়ী। যেহেতু আমার কাছে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং ভাল লাগে সেহেতু আমি এই বিষয় নিয়েই কিছু বলতে চাই।আমি নিশ্চিত, এই মুহূর্তে আপনারা যারা আমার এই লেখাটা পড়ছেন, তাদের বেশিরভাই হয়ত জানেন যে, অনলাইনে কাজ করে টাকা উপার্জন করা যায়। কিন্তু কিভাবে করা যায় সেটা কি জানেন? যাই হোক আজ আমি বলতে চাচ্ছি না যে কিভাবে অনলাইনে কাজ করে আয় করা যায়। আমি শুধু বলবো এই নতুন বছরটাকে কিভাবে জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে শুরু করতে পারেন।
ধরুন আপনি ওয়েব ডেভেলপার বা ডিজাইনার হয়ে অনলাইনে কাজ করে জীবন প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। অনেকেই হয়ত ইতোমধ্যে শেখা শুরু করে দিয়েছেন। আমি শুধু সেই সমস্ত মানুষদের জন্যই লেখাটা লিখছি যারা সম্পূর্ণ নতুন। যারা অনেক এগিয়ে গেছেন তারা লেখাটি না পড়লেও পারেন।
২০১১ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিং করলেও শুরুতে ডাটাএন্ট্রি ও ওয়েব রিসার্চ এর কাজ দিয়েই শুরু করেছিলাম। গত বছরের প্রথম দিকের কথা, আমি প্রথম ওয়েব ডিজাইন এর কাজ শেখা শুরু করি। এক বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। নিজের কাছে বিশ্বাসই হচ্ছে না যে কিভাবে কি হয়ে গেলো। ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করতে করতেই ওয়েব ডিজাইনের প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়। ডাটাএন্ট্রি ও ওয়েব রিসার্চ এর কাজের পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়ে আমার দক্ষতা দেখে কয়েকজন ক্লায়েন্ট আমাকে টুকটাক এইচটিএমএল এর কাজ করতে বলতো। আমার একজন ক্লায়েন্ট আছে যিনি ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপ এর কাজ করেন, আমার তৈরী করে দেওয়া একটি Proposal Letter এর মাধ্যমে তিনি $২৫০০০ (পঁচিশ হাজার ডলার) মূল্যের একটি কাজ পান। তখন তিনি আমার পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দেন এবং আমাকে তার সহকারী হিসেব স্থায়ী করে নেন, সেই সাথে আমাকে দিয়ে টুকটাক ওয়েব ডিজাইনের কাজ করাতেন। এভাবে তার পরামর্শেই ওয়েব ডিজাইনের কাজ শেখা শুরু করে দেই। বিভিন্ন ধাপে ধাপে এগিয়ে এই একবছরে বেশ ধারণা পেয়েছি যে কিভাবে কি করা লাগে। এই এক বছরের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে এখন আমি টুকটাক কাজ করছি। অথচ এক বছর আগেও আমি শুধুমাত্র ডাটাএন্ট্রি ও ওয়েব রিসার্চ এর কাজের পিছনে পড়ে ছিলাম। আমি কি পারবো! আমাকে দিয়ে কি হবে? কিন্তু সবসময় মনে জোর রাখতাম আর ভাবতাম অনেকেই তো পারছে তাহলে আমি পারবো না কেন? এই চিন্তা ভাবনা আর পথচলা।
তাই বলে ভাববেন না যে আমি বড় ধরণের ওয়েব ডিজাইনার হয়ে গেছি। আসলে সেরকম মোটেই না। আমি কেবলমাত্র শুরু করেছি। এখনো পুরোটা পথই বাকি। ফ্রিল্যান্সিংএ মাত্র ৩ বছর পেরোলো আর ওয়েব ডিজাইনের হাতেখড়ি মাত্র ১ বছর। আরো বছর দু’এক পর হয়তো প্রতিষ্ঠিত ফ্রিলান্সার হিসেবে নিজেকে দাবি করতে পারবো সেই সাথে একজন ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে। একথা শুনে অনেকেই হয়তো ভাবছেন এতো সময় ধরে কাজ শেখার ধৈর্য আপনার নাই। তাহলে বলবো- ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য নয়। চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী পড়াশুনা করুন এরপর চাকুরি খুঁজতে থাকুন।
বলে রাখা ভাল আমি শুরুতে শুধুমাত্র একজন চাকুরীজীবিই ছিলাম, একটু একটু করে ফ্রিলান্সিংএ এগিয়েছি। কিন্তু এখন আমি নিজেকে ফ্রিলান্সার হিসেবে পরিচয় দিতে ভালবাসি। এখন আমি একজন ফ্রিলান্সার, সাথে চাকুরীজীবি। আমার কাছে চাকুরীর চাইতে ফ্রিল্যান্সিংটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারন কোম্পানী চাইলে আমাকে চাকুরী থেকে বাদ দিতে পারে, কিন্তু আমি না চাইলে ফ্রিল্যান্সিং আমাকে বাদ দিতে পারবে না। তাছাড়া চাকুরীর চাইতে আমি ফ্রিল্যান্সিংএর মাধ্যমে কয়েকগুন বেশি উপার্জন করি।একটা কথা ভাবলেই তো হয় যে, আপনি যে পেশাটা বেছে নিচ্ছেন সেটা করলে আপনি মাসে ২০/৩০ হাজার টাকা বা তারও বেশি আয় করবেন। তাহলে কাজটা করতে হলে তো আগে জানতে হবে কিভাবে করতে হয়। আর জানতে হলে শিখতে হবে। শিখতে হলে অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
অনেকেই হয়ত এখনো স্টুডেন্ট। হয়ত কয়েকবছর পর পড়াশুনা শেষ করে চাকরি খোঁজা শুরু করতে হবে। কেন ভাই, পড়ালেখার পাশা পাশি কি টুকটাক কাজ শেখা যায় না? অনেকেই তো কম্পিউটারে বসে গান শুনে, ফেসবুকে বসে অযথা সময় নষ্ট করে থাকেন। সেই সময়টাই কাজে লাগান না। একটু সময় নিয়ে একটা ভাল কাজ শিখুন। দেখবেন পড়াশুনা শেষ হতে না হতেই আপনার জন্য কাজ হাজির সাথে উপার্যনও। এরপর আশা করি আপনাকে হয়ত আর চাকুরিই খুঁজতে হবে না।
নিশ্চয়ই প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে যে, কাজ শিখবেন কিভাবে? আগে নিজেকে স্থির করুন কোন কাজটি শিখলে আপনি ভাল করতে পারবেন। আমাদের হাতের নাগালেই ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর কাজ শেখার মত অনেক রিসোর্স রয়েছে। শুধু একটু কষ্ট করে নিজের অবস্থানটাকে বিস্তৃত করুন আর দেখুন আপনার আশেপাশে কে কিভাবে নিজ চেষ্টায় কাজ শিখে কাজ করছে!
আপনি স্বপ্ন দেখছেন অনলাইনে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা ঘরে আনবেন কিন্তু এমনি এমনি তো আর কেউ আপনাকে টাকা দিবে না। বিশ্বের বড় বড় ফ্রিলান্সারদের সাথে টক্কর দিয়ে কাজ করতে হবে। ব্যাপারটা ভেবে দেখেছেন? সেরাদের সেরা কিভাবে হতে হবে একসময় আপনি নিজেই সেটা বুঝতে পারবেন।
তবে এর জন্য আপনার যেটি দরকার, তা হলো প্রবল স্বদিচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা। তাই আগামী নতুন বছরটাকে এখন থেকেই কাজে লাগান। প্রথমে আপনার কি কি শেখা লাগবে তা এখনই স্থির করুন! এর পর চেষ্টা করুন আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। তবেই একসময় আপনার হাতে সাফল্য ধরা দিবে। আপনার সাফল্যের অপেক্ষায় থাকলাম।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন